তারা ভেবেছিল, পানির ঢলে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেবে। স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হওয়ার আগেই তা ডুবিয়ে দিবে। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছে, আমরা রক্তের স্রোতকেও পরাজিত করেছি, সুতরাং পানির ঢল দিয়ে আমাদের হারানো কখনোই সম্ভব নয়।
তাদের ধারণা ছিল, একদল শহরবাসী যখন ঘরবাড়ি হারিয়ে ফেলবে, তাদের সবকিছু ভেসে যাবে, তখন হয়তো আমাদের ঐক্যের বাঁধও ভেঙে যাবে। আমরা ভেঙে পড়বো, একে অপরের প্রতি যে ভালোবাসা, সম্মান আর ভ্রাতৃত্ব রয়েছে, তা হ্রাস পাবে।
তারা দেখতে চেয়েছিল আমাদের একতা কতটুকু শক্তিশালী? দেশ ও জাতির স্বার্থে আমরা আর কি কি করতে পারি?
তারা আজ দেখুক, আমাদের ঐক্য কতটা শক্তিশালী। এই জাতি একে অপরের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত?
তাদেরকে আজ স্মরণ করিয়ে দিন, আমরা এমন এক জাতি, নিজেরা না খেয়েও আমরা অপরকে খাওয়াতে পারি । নিজের বুকে কষ্ট রেখেও আমরা অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চাই ।
শত্রুরা ভেবেছিল, পানি দিয়ে আমাদের ঐক্যকে ভেঙে ফেলবে, কিন্তু এই পানি আমাদের একতাকে আরো মজবুত করে তুলেছে। তারা যখন আমাদের তিনটি শহর ডুবিয়ে দিলো, পুরো জাতি তখন একসঙ্গে তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।
তাদের ষড়যন্ত্র ছিল, আমাদেরকে বিভক্ত করার। পরস্পরের ভাতৃত্বের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করার । কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, আমাদের মধ্যে রয়েছে এমন শক্তি, যা প্রতিকূলতার সময়ে আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
২০ আগস্ট ২০২৪ এর দিনটি এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার দিন। শত্রু ও বন্ধুর মাঝে পার্থক্য করার দিন। আস্তিনের সাপ বেরিয়ে আসার দিন ।
এই দিনে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে আমাদের ফেনী, নোয়াখালী, এবং কুমিল্লা জেলা তলিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারায় । উন্মত্ত স্রোতে অনেক জীবন হারিয়ে যায়। অসংখ্য পরিবার পথে বসে। কিন্তু সেই দুঃসময়ে আমরা আমাদের একতা দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি, এই দেশ কখনোই পরাভূত হবে না।
দেশজুড়ে মানুষ যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যেভাবে ছুটে আসতে শুরু করেছে এসব দেখে সত্যিই বলতে হয় এ জাতিকে থামিয়ে দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে। অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে এই দুর্যোগে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গলা পানিতে নেমে তারা নিরলসভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছে।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এসময়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা ১০০ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছে, যা সত্যিই অভাবনীয়। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা কেবল নিজেদের জন্য নয়, আমাদের আশেপাশের মানুষের জন্যও বাঁচি। তাদের এই ত্যাগ আর সহযোগিতার দৃষ্টান্ত আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
এসব দেখে হয়তো তাদের অন্তরে হিংসার আগুন আরও প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। তারা আমাদের বিভক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আসলে, তাদের এই পরিকল্পনা আমাদের আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
তারা হয়তো ভেবেছিল, কয়েকটি শহর ডুবিয়ে দিলে আমাদের নতুন সরকার চাপের মধ্যে পড়বে, আমাদের ঐক্য ভেঙে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তারা দেখেছে, আমাদের মাঝে এক অসম্ভব শক্তিশালী ঐক্য বিরাজমান। আমরা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আমাদের প্রতিটি নাগরিক একেকজন সৈনিক। একেকজন প্রশাসক। আমাদের দেশ আমাদের সবার, এবং একে রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের সবার।
যারা শত্রুতা করে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের বিভক্ত করতে চেয়েছিল, তাদেরকে আমরা এই ছোট্ট একটি বার্তা দিতে চাই— একথা মনে গেঁথে নিন, আমাদের একতাকে ভাঙা সম্ভব নয়।
আমাদের একতা ছাত্র-জনতার একতা। পুরো দেশবাসীর একতা । আলেম-ওলামার একতা। ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে একতা। এই একতা কোনো শক্তির কাছে পরাজিত হবে না।
তাদের বিভক্ত করার প্রচেষ্টা আমাদেরকে আরো একত্রিত করেছে। আমাদের মধ্যে ভালোবাসা, সম্মান, সহানুভূতি এবং একতার শক্তি আরও বৃদ্ধি করেছে। এই দেশ একটি জাতি, একটি হৃদয়, একটি মন। আর সেই মন, সেই হৃদয় যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ এই দেশকে ধ্বংস করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
পরিশেষে আমি এই জাতিকে স্যালুট জানাই—এমন একটি জাতি, যারা সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও একতাবদ্ধ থাকে, যারা তাদের ভালোবাসা আর সহানুভূতি দিয়ে সমস্ত বাঁধাকে পরাভূত করে। চিরকাল বেঁচে থাকুক আমাদের এই অনন্য শক্তি, আমাদের একতা।